শাহিনুর আক্তার: নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী মো: মোস্তফা বিনা টিকেটে রেলওয়ে ভ্রমণ করেছেন ৪০ বছর আগে। নরসিংদী থেকে ট্রেনে করে কাপড় বিক্রির অর্ডার সংগ্রহ করতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। খামখিয়ালিপনা ও সচেতনতার অভাবে ট্রেনের টিকেট কাটা হয়নি তখন। কিন্তু এখন সেই সব স্মৃতি ও টিকেট না কাটার অপরাধবোধ তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিয়মিত। অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে রবিবার দুপুরে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে হাজির হন মোস্তফা ।
নরসিংদী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাপড় ব্যবসায়ী মোস্তফা বিবেকের তাড়নায় নিজেই স্টেশনে আসেন। হিসাব করে আগের ট্রেন ভ্রমণ বাবদ আনুমানিক আট হাজার পাঁচশত বিশ টাকা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেন এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তার সমপরিমাণ টিকেট তার হাতে তুলে দেন। তার এ উদ্দ্যোগকে স্বাগত জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে টিকেট কেটে ট্রেনে ভ্রমণের প্রতি সচেতনতা বাড়বে বলে আশা করছেন টিকেট কর্তৃপক্ষ।
মো. মোস্তফা (৬৩) নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার উত্তর মির্জানাগর ইউনিয়নের হোগলা কান্দি গ্রামের মৃত হাজী আব্দুল ওয়াবের ছেলে।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা তার উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ৪০ বছর আগে তিনি কতবার ভ্রমণ করেছেন সেটা বলা কঠিন। তাই আনুমানিকভাবে আট হাজার পাঁচশত বিশ টাকা গ্রহন করে তার সমমূল্যের ট্রেনের টিকেট দেয়া হয়েছে। তার পরিশোধ করা টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে।
মো. মোস্তফা বলেন, “৪০ বছর আগে আমি নরসিংদী থেকে ট্রেনে করে ফেনি,চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে চড়ে দোকানে- দোকানে কাপড়ের অর্ডার নিতাম। কাজ শেষ করে ফিরতি ট্রেনে আবার চলে আসতাম। ওই সময় খামখেয়ালিপনা কিংবা মনের অজান্তে ট্রেনের টিকেট কাটার কথা ভাবতামই না।” তিনি আরও বলেন, “গত ৪ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। বিবেকের তাড়নায় গত বৃহস্পতিবার নরসিংদী রেলস্টেশনে এসে পুরো বিষয়টি জানিয়ে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারের সহায়তা চাইলে তাদের সহায়তায় আজকে টাকাগুলো প্রদান করেছি। এখন অনুশোচনা থেকে মুক্তি পেয়েছি, শান্তি লাগছে।”
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাইদুল ইসলাম বলেন, “মো. আবদুল কাইয়ুম মিয়া সচেতনতার ও ন্যায়বোধের পরিচয় দিলেন।রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তার এই উদ্যোগে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণে অন্যদের নিরুৎসাহিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরাও চাই প্রত্যেকে টিকেট কাটার বিষয়ে সচেতন হোক, আগ্রহী হোক।” এ সময় নরসিংদী রেলওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।