বাকি বিল্লাহ নরসিংদী : কবি রজনীকান্ত সেন তার স্বাধীনতার সুখ কবিতায় লিখেছেন-
বাবুই পাখিরে ডাকি, চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টির, ঝড়ে।
ঠিক তাই। রোদ,বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে মানুষ সহ পশু পাখিদেরও আশ্রয়ের একটি স্থান থাকে। আর সে আশ্রয়ের জন্য পখি বিভিন্ন খড় কুটা দিয়ে বাসা তৈরি করে আর মানুষ তৈরি করে ঘর। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ঘরের মাঝে মাটির ঘর হলো অন্যতম এবং গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যও বলা চলে। গ্রাম বাংলার এ ঐতিহাসিক মাটির ঘর এখনো দেখা যায় নরসিংদীর বেলাব উপজেলাতে।
যুগ যুগ ধরে এই উপজেলার পোড়াদিয়া,সুটুরিয়া, ভাববলা,পাটুলি, বাঘবের, টঙ্গীরটেক,চন্ডিপাড়া,আমলাব,উজিলাব,উয়ারী, বটেশ্বর,ইত্যাদি এলাকার বাসিন্দারা মাটির ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে বেলাব উপজেলায় অনতত কয়েক হাজার মাটির ঘর রয়েছে। যে মাটির ঘর গুলো আপন মহিমায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বুকে লালন করে রেখেছে।
এসকল এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাল মাটির সাথে চুন, তুষ গুলিয়ে আস্তে আস্তে মাটির ঘর গুলোর দেয়াল তৈরি করা হয়। প্রাথমিক ভাবে মাটির দেয়াল তৈরি করা হলে নিড়ানি দিয়ে ইটের দেওয়ালের প্লাস্টারের মত সমান করা হয়। এর পর আবার পাতলা গুলা তথা কাঁদা মাটি দিয়ে লেপ দিয়ে ঘরকে করা হয় সৌন্দর্য্য মন্ডিত। কোন কোন ঘরের দেয়ালে করা হয় কারুকাজ। এভাবে ঘরের দেয়াল তুলে সে দেয়ালের উপরে দেওয়া হয় টিনের চাল। এভাবে একটি মাটির ঘর তৈরি করতে লেগে যায় তিন বা চার মাস।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে অধিকাংশ মাটির ঘরই ২০/২৪ হাতের মতো দৈর্ঘ্য আর ১০/১২ হাতের মত প্রস্থ হয়। মাটির দেয়াল গুলো তৈরি করা হয় এঁটেল মাটি দিয়ে। শুরুতেই তিন ফুট প্রস্ত মাটির দেওয়াল তৈরি করতে হয়। এর পর উপরে ২ ফুট প্রস্ত করে বাকি দেওয়াল তুলতে হয়।
ঘর নির্মাণ শ্রমিক মজিদ মিয়া জানান, অনেক বছর এ কাজ করেছি। আমাদের ৭/৮ জনের একটা দল আছিল। আমরা দলে মিলে এ ঘর বানাইতাম। এহত তো আর আগের মতো মাটির ঘর মানুষ বানায় না। মানুষ এখন ইটের ঘর বানায়। তবে আমরা যেই মাটির ঘর বানাইতাম তা ইটের থেইক্কা আরো শক্ত হইত। মাটি দিয়া আমরা দুই তালা ঘর ও বানাইছি।
পোড়াদিয়ে গ্রামের ওহিদুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান,এখন তো আর মাটির ঘর মানুষ বানায় না। সকলেই বিল্ডিং করে। আগের মত মাটি পাওয়া যায়না। ঘরের দেওয়াল দেওয়ার মিস্ত্রী ও নেই আগের মতো। তবে মাটির ঘরে অন্য ঘরের চেয়ে আরাম বেশি। কারণ গরম কালে গরম কম লাগে শীত কালেও শীত লাগে কম।
সুটুরিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, মাটির ঘরের সুবিধা যেমন অসুবিধাও আছে। আপনার সুবিধা হলো কম টাকায় ঘর বানানো যায়। ঝর বা ভূমিকম্পে ইটের দেয়াল ফাঁটলেও মাটির ঘর ফাঁটতে দেহিনাই। অসুবিধা হলো ঘরের দেয়াল মোটা করে দিতে হয়। তাই ঘরের ভিতরে জায়গা কম থাকে। কয়েক বছর পর পর দেয়াল কাদা মাটি দিয়ে লেপে দিতে হয়।
মাটির এ ঘর গুলো আমাদের অতীত ঐতিহ্য। যুগের পর যুগে এ মাটির ঘর গুলো বিভিন্ন এলাকায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও সগৌরবে নরসিংদীর বেলাবতে দাঁড়িয়ে আছে অনেক মাটির ঘর। এরা আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে।